কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা সংখ্যায় বেশিরভাগ মানুষই আল্লাহর সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করি না।
কেউ বলে আল্লাহ্ নিরাকার কেউ বলে আল্লাহর আকার আছে!
কেউ বলে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান আবার কেউ বলছে আল্লাহ সাত আসমানের উপর আরশে আযীমে সমাসীন!
জন্মঅবধি এই বিতর্ক দেখে আসছি ।
তবে সত্য কোনটা? সত্য তো একটাই হবে, দুটো কখনোই হবে না। কেননা, দুটো সম্পূর্ণ বিপরীত।
চলুন দেখে নিই আল্লাহ নিজে তাঁর পরিচয় দিয়েছেন কি-না? তিনি কোথাও বলেছেন কি-না যে, তিনি কোথায় থাকেন!
আল্লাহ কোথায় থাকেন । আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা কোনটি?
সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আপনি যতই ইবাদাত বন্দেগী করেন না কেন, তা কাজে আসবে না।
আপনার নামায আর পাশের জনের মন্দিরে ভক্তি দেওয়া, আপনার সাওম আর পাশের জনের উপবাস থাকা, আপনার কুরবানি আর পাশের জনের পাঁঠা বলির মাঝে কোন পার্থক্য থাকবে না।
ঈমাম বোখারি তার কিতাবুল বোখারির ৭১ নং পৃষ্টায় ইলম সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ-"কোন কাজ করার পূর্বে তার জ্ঞান অর্জন আবশ্যক।"
সেই অনুযায়ি আমরা আল্লাহ কে বিশ্বাস করার পূর্বে তাঁর ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করবো এটাই স্বাভাবিক।
অনেক হুজুর বলে থাকেন যে, আল্লাহ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করা যাবে না।
কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নিজেই বলেছেনঃ-"তিনি হলেন রহমান। তাঁর সম্পর্কে যার জ্ঞান আছে তাকে জিজ্ঞাসা করো।"
সূরা মুহাম্মদের ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেনঃ"জ্ঞান অর্জন করো সেই স্বত্তার ব্যাপারে, যিনি তোমাদের একমাত্র প্রতিপালক।"
আজ আমরা প্রথমেই আল্লাহ নিজ থেকে যে পরিচয় দিয়েছেন তা জানবো। তারপর দেখবো যুগে যুগে বিজ্ঞ জনরা কি বলে গেছেন।
আল্লাহর কি আকার আছে , নাকি তিনি নিরাকার?
ভারতবর্ষের অধিকাংশ ব্যক্তিকে যদি বলা হয় আল্লাহর আকার আছে নাকি নিরাকার?
তবে সরাসরি বলে দেয় আল্লাহ নিরাকার!!
আবার যদি বলা হয় তিনি আছেন কোথায় ? তবে সরাসরি বলেন , মুমিন বান্দার ক্বালবে(অন্তরে) এবং সেই সাথে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান।
আল্লাহ কি নিরাকার?
আল্লাহ তায়ালা সূরা ফুরকানের ৫৯ নং আয়াতে বলেছেনঃ-"আল্লাহ তো তিনিই,যিনি এই আসমান-জমিনের সবকিছুকে মাত্র ৬ দিনে তৈরি করেছেন। অতঃপর আমি আরশে আযীমের উপরে সমাসীন হয়েছি।"
সুরা ত্বহার ৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেনঃ"“দয়াময় আল্লাহ তায়ালা আরশের সমাসীন হয়েছেন"
উল্লিখিত আয়াতসমূহ থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি আল্লাহ আরশে আযীমের উপর সমাসীন। তিনি স্বর্বত্র বিরাজমান নন। তিনি তাঁর কুদরতী দৃষ্টি দ্বারা সমস্ত কিছু দেখছেন একযোগে।
আল্লাহর আকার আছে তার প্রমাণ কি?
এবার আসি আল্লাহর আকারের ব্যাপারেঃ-
সূরা রাহমানের ২৭ নং আয়াতের মাঝে আল্লাহ বলেছেনঃ" এবং অবিনশ্বর শুধু আপনার প্রতিপালকের চেহারা । যিনি মহিমাময়, মহানুভব।
সূরা রাহমানের ২৭ নং আয়াতের মাঝে আল্লাহ বলেছেনঃ" এবং অবিনশ্বর শুধু আপনার প্রতিপালকের চেহারা । যিনি মহিমাময়, মহানুভব।
এই আয়াত থেকে আমরা আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীনের চেহারার প্রমান পাই।
এরপর সূরা ছ্বদ এর ৭৫ নং আয়াতে আমরা আল্লাহর হাতের ব্যাপারে জানতে পারি।
উক্ত আয়াতে আল্লাহ বলেছেনঃ কিসে তোমাকে বাঁধা দিলো ঐ ব্যক্তিকে সিজদাহ্ করতে! যাকে আমি নিজ দুই হাত দ্বারা তৈরি করেছি।"
তিনি তাঁর আকারের প্রমাণ দিতে গিয়ে আরোও বলেন, এবং কিয়ামাত দিবসে আপনার প্রতিপালক আর ফেরেশতাগ্ণ কাতারবন্দী হয়ে আগমন করবেন। ( সূরা ফাজরঃ২২ নং আয়াত)
আল্লাহর আকারের প্রমাণ নিতে আরো দেখতে পারেন (সূরা মায়েদাহ্=৬৪, সাজদাহ্=৪, হাদীদ=৪, ইউনুস=৩, আল কিয়ামাহ্=২২,২৩) আয়াতসমূহ ।
আল্লাহর আকার প্রমাণ করতে অসংখ্যক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যা পোস্টের আকারের দিকটা বিবেচনা করে উল্লেখ করছি না।
তথাকথিত বড়পীর হিসেবে খ্যাত আব্দুল কাদের জীলানী তার গুনীয়াতুত ত্বালিবীন গ্রন্থে বলেনঃ-
আল্লাহ পাক আরশে সমুন্নত রয়েছেন। রাজত্ব নিজ আয়ত্বে রেখেছেন। সমস্ত বস্তুকে বেষ্টন করে রেখেছেন।আর এভাবে তাঁর পরিচয় দেওয়া জায়েয নয় যে , তিনি স্বর্বত্র #বিরাজমজান। বরং বলতে হবে তিনি আরশের উপর রয়েছেন। যা তিনি সূরা ত্বহার ৫ নং আয়াতে বলেছেন।
এ কথা স্বাভাবিক ভাবেই বলতে হবে। কোন অপব্যাখ্যা করে নয়। তিনি আসমানে আছেন এ কথা নবী-রাসূলদের প্রতি নাযিলকৃত প্রত্যেক কিতাবেই আছে। তবে তিনি আরশে কিভাবে আছেন তা জানা নেই।"
ঈমাম আহমাদ বলেনঃ"আল্লাহ সপ্তাকাশের উপরে রয়েছেন,সৃষ্টিকূল একে পৃথক রয়েছেন এবং তাঁর কুদরত আর ইলম সর্বস্থানে পরিব্যপ্ত। "
ঈমাম আহমাদ বলেনঃ"আল্লাহ সপ্তাকাশের উপরে রয়েছেন,সৃষ্টিকূল একে পৃথক রয়েছেন এবং তাঁর কুদরত আর ইলম সর্বস্থানে পরিব্যপ্ত। "
শেষকথা
আল্লাহ কোথায় অবস্থান করেন? তিনি আরশে আযীমের উপর রয়েছেন, কিভাবে আছেন তা জানি না।
আল্লাহ আমাদেরকে সত্য খুঁজে নেওয়া এবং সেই সাথে সত্যের পথে অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন।
আল্লাহুম্মা আমীন।
1 comments:
সুবহান আল্লাহ!!! পড়ে ভালো লাগলাে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এরকম অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় তথ্যটি জানানোর জন্য। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকেই সঠিক বুঝ ও জ্ঞান দান করুন। আপনাকে আরও ধন্যবাদ ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি ব্লগে এত সুন্দরভাবে স্বাগতম জানানোর জন্য। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন