Cute Orange Flying Butterfly এক নজরে দৌলতদিয়া পতিতালয় - ভ্রমণ ও অর্জিত অভিজ্ঞতা ~ ‎অচিনপুরের আইয়ুব‬
আস-সালামু আলাইকুম। আমি আইয়ুব আনসারি। আমার লেখাগুলো পড়তে প্রত্যহ ব্লগটি ভিজিট করুন

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৭

এক নজরে দৌলতদিয়া পতিতালয় - ভ্রমণ ও অর্জিত অভিজ্ঞতা


দৌলতদিয়া পতিতালয় ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

স্থানঃ দৌলতদিয়া পতিতালয় 


এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ এই পতিতাপল্লীর নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দূষ্কর। যা অবস্থিত রাজবাড়ি জেলার অন্তর্গত দৌলতদিয়ায়। এটার অবস্থান এমন এক জায়গায় যে দক্ষিণবঙ্গের মানুষজন এই রুট ছাড়া অন্য কোন রুটে চলাচলও করতে অক্ষম।  

দক্ষিণবঙ্গে যেহেতু জীবনের বেশ কিছু সময় কাটিয়েছি, সেহেতু এই রাস্তা ধরে চলাচল করতে হয়েছে বহুবার। ঢাকায় আসা-যাওয়ার জন্য এই দৌলতদিয়া - পাটুরিয়া নৌরুট'ই একমাত্র সমাধান। সেই সুবাদে ঘাটে অনেকবার গিয়েছি। 

কিন্তু! বাজারের পাশেই অবস্থিত এই নিষিদ্ধ পল্লীতে কখনো যাওয়া হয়নি। লোকমুখে অনেক কথাই শুনেছি এই এলাকা সম্পর্কে। আমার কিছু বন্ধু-বান্ধব তো তাদের সর্বস্ব খুঁইয়েছে এই এলাকায়। 

সময়টা ২০১৬ এর শেষ মাস মানে ডিসেম্বরের দিকে। আমি আর মাহমুদ (ক) ফরিদপুর থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম। যেহেতু শীতকাল, সেহেতু আমরা সকাল সকাল রওনা দিলাম। ফরিদপুর পলিটেকনিক সংলগ্ন বায়তুল আমান বাজার থেকে থ্রি-হুইলার তথা অটোতে পৌঁছলাম ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড। 

এরপর ঘাটের গাড়িতে (বাস) চড়ে পৌঁছলাম দৌলতদিয়া বাস টার্মিনালে। বাস টার্মিনালের বিপরীতে যে ছোট ছোট টিনের ঘরগুলো দৃশ্যমান, সেখান জুড়েই নাকি পতিতাদের বসবাস। দিন নেই, রাত নেই! অবিরাম লাখো পাপীর পাপের বোঝা ভারী হয় এখানে। লাখ লাখ লোকের পাপের সাক্ষী এই অঞ্চল। 

সেই নিষিদ্ধ এরিয়ায় যারা গিয়েছেন, তারা আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবেন।  যা হোক, এখান থেকে ফেরী বা লঞ্চের মাধ্যমে পার হতে হবে সর্বনাশা পদ্মা নদী। সেখান থেকে বাসে আবার যেতে হবে ঢাকার দিকে। বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এদিকে আমাদের ওজন কমানো জরুরি হয়ে পড়েছে। 

টার্মিনালের অপোজিটে একটা সরু রাস্তা ভেতরের দিকে চলে গেছে। এ রাস্তার শেষ কোথায় কে জানে! আমরা দুজনে সেদিকে এগোলাম পেশাব করার জন্য। জনমানবহীন রাস্তার ধারে এক খড়ের গাদা পেয়ে গেলাম। আর সেখানেই দুজনে জরুরত সাড়লাম। 

মাহমুদ আমাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলো, এই এলাকা মোটেও সুবিধার না। ডানে বামে বেশি তাকাতাকির প্রয়োজন নেই। আর কালক্ষেপন করলেই বিপদের আশঙ্কা। সেই হিসেবে আমরা তড়িৎ গতিতে প্রস্থানের চেষ্টা করলাম। 

ফেরার সময় দেখলাম টং দোকানগুলোর পাশে অটো-রিকশার ভিড়। আমরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে টং দোকানগুলোর কাছে পৌঁছলাম। মাহমুদ তার জন্য একটা সিগারেট আর আমার জন্য ক্যান্ডি নিলো। এরপর আমরা পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে চললাম। 

এমন সময় মোটামুটি বয়স্ক একটা ব্যক্তি (৪৫) আমাদের পাশ কাটিয়ে জোরে হাঁটতে থাকলো। যেই আমাদের কাছাকাছি আসলো, তখনই খামাখা বাতাসের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। 

কথার সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলোঃ 

- কি বলেন ভাই? 

( আমি চুপচাপ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম) আর কয়েকধাপ দিলেই আমরা ৩ মাথায় পৌঁছে যাবে। এমন অবস্থায় রাস্তার পাশে আমি থেমে গেলাম ,মাহমুদও থামলো।। 

এবার লোকটি আমাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করতে লাগলো আরো সিরিয়াসভাবে। আমরা তাকে এভয়েড করছিলাম । আমরা রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছি এমন  সময় লোকটি বললোঃ

- পাড়ায় গেলে এইদিক দিয়ে যান । কোন সমস্যা নাই, আমরা আছি। 

আমরা তার কথায় ভ্রূক্ষেপ করলাম না। আপনগতিতে অগ্রপাণে চলছি...

একটু এগোতেই পিছু নিলো কয়েকজন রিকশা ওয়ালা। গা ঘেঁষে রিকশা চালাচ্ছে আর বলছে, 

- ৫ টাকা দেন গেটে নামিয়ে দিয়ে আসি। হেঁটে গেলে দালালের পাল্লায় পড়বেন। ওরা জ্বোরাজোরি করে বাজে কাণ্ড ঘটাবে। ( কিন্তু ওরা নিজেই দালাল ছিল) 

আমরা পাত্তা না দেওয়ায় কয়েকজন সড়ে গেল। খানিকবাদে একজন রিকশাওয়ালা নাছোড়বান্দার মতো পিছু নিল। 

চলেন ভাই , বিনা রিস্কে নামাই দিয়া আসি। মাহমুদ সামনে আমি পেছনে। একধাপ দুইধাপ করে সামনে এগুচ্ছি। আমাদের গা ঘেঁষে রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলো লোকটি। আমরা দুজনেই বেশ চুপচাপ এগিয়ে যাচ্ছিলাম। 

এমন সময় আবারোও রিকশাওয়ালার রিকুয়েস্ট শুনে একটু ঝাড়ি দিয়ে বললামঃ 

- কথা বোঝেন না ? 
মাহমুদঃ- আরে মিয়া দেখেন কোনদিকে যাই... 
রিকশাওয়ালাঃ- এ যুগে ভাল কথা বলতে নাই। 
( আরোও কিছুদূর গেলাম ) 

এসময় কয়েকটি রিকশা আমাদের পথরুদ্ধ করার চেষ্টা করছিলো। নিরুপায় হয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হলাম। পরিস্থিতি ভালো না দেখে বেশ অশ্লিল বাক্য-বিনিময় চললো। 

আমাদের কনফিডেন্ট লেভেল হাই দেখে তারা আমাদের বাসা কোথায় তা জানতে চাইলো। পরিস্থিতি আরো বাজে হতে পারে দেখে আমরা ভিন্ন পথে হাঁটার চেষ্টা করলাম। 

বাস্তবে আমার বাসা রাজশাহীর অদূরে নওগাঁ জেলায়। আর মাহমুদ পাবনার ছেলে। আমরা স্রেফ জানিয়ে দিলাম, আমাদের বাসা ফরিদপুর সদরের গোয়ালচামট। আমাদের পরিচিত কিছু ব্যক্তির নাম জানিয়ে দিলাম। আমাদের সাথে আর বেশি কিছু করার চেষ্টা করলে তাদেরকে জানিয়ে দেয়ার কথা জানালাম। 

তারা একে একে কেটে পড়লো। আমরা নিরাপদে টার্মিনালের এপাশে পৌঁছলাম। তারপর ফেরিঘাটে গিয়ে ফেরীতে করে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছলাম। 

নদীর এপাশে এসে শান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আমরা এমন পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিলাম। সামান্য ট্রিক্স কাজে না লাগালে বা কনফিডেন্ট লেভেল একটু কম থাকলেই আমরা ফেঁসে যেতাম। 
আমাদের কাছে থাকা সহায় সম্বল সব তারা রেখে দিতো। 

শুধু এতেই শেষ হতো না, তারা আমাদের পরিবারের লোকজনের কাছে ফোন করে আমাদের ব্যাপারে বাজে কথা বলা হতো। এমনকি আমাদেরকে বেঁধে রেখে মুক্তিপণও আদায় করার চেষ্টা করতে পারতো। 

সতর্কতাঃ

এলাকা ঘুরে যা বুঝলামঃ 

যদি আপনি অতিরিক্ত চালাক বা একদম ভীতু হোন তবে আপনি তাদের শিকার হতে সময় লাগবে না। 
কাছে যা আছে সব কেড়ে নিবে। আর এমন কাহিনী আজ নতুন নয়। প্রতিনিয়ত এমন কাহিনী ঘটে থাকে সেখানে।  

আপনার মান-সম্মানের ফালুদা বানিয়ে ছাড়বে। আপনি একজন চরিত্রবান ব্যক্তি হলেও তারা আপনাকে চরিত্রহীন বানিয়ে দিবে। সমাজে মুখ দেখাবার মতো পরিস্থিতি আর থাকবে না। 

বিভিন্ন সময়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহঃ

দৌলতদিয়া কিভাবে যাওয়া যায়?

আপনি যদি ঢাকা থেকে যেতে চান তবে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাটের বাসে উঠবেন। পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরী বা লঞ্চে নদী পার হলেই দৌলদিয়া পৌঁছে গেলেন। 

দৌলতদিয়া পতিতালয় কোথায় অবস্থিত?

দক্ষিণাচঞ্চলের রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়নের নাম দৌলতদিয়া। আর এই অঞ্চলের ফেরিঘাটে দৌলতদিয়া পতিতালয় অবস্থিত। 

ঢাকা থেকে দৌলতদিয়া কিভাবে যাব?

এ প্রশ্নের উত্তর উপরে দেয়া হয়েছে। আশাকরি এটার ভিন্ন কোন উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। 

দৌলতদিয়া পতিতালয়ে যাওয়ার উপায় কি?

আপনার প্রশ্নে ভুল হয়েছে। প্রশ্নটি হবে, জাহান্নামে যাওয়ার রাস্তা কোনদিকে। আপনার মাথা থেকে বাজে চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। একজন সূস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি কখনো পতিতালয়ে যাওয়ার চিন্তাও মাথায় আনবে না। 

আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন, তবে শরীয়তের বিধান মেনে এসব থেকে দূরে থাকুন। আর আপনি যদি অন্য ধর্মাবলম্বী বা নাস্তিক হয়ে থাকেন, তবে অন্তত বিজ্ঞানস্মত জীবন-যাপন করুন। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হোন। এইডস সহ নানান মরনঘাতি যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখুন। 

শেষকথা

আমি কোন ট্রাভেলার্স বা ত্রাভেল গাইড নই। এই পোষ্টে আমি শুধুমাত্র আপনাকে দৌলতদিয়া ঘাটের পতিতাপল্লি সম্পর্কে সতর্ক করেছি। আমি আশাকরছি, এই পোষ্টের কোন তথ্য কেউই কখনো বাজে কাজে ব্যবহার করবেন না। 

সর্বোপরি, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় করুন। তাঁর আদেশের অবাধ্য হবার বৃথা চেষ্টা করবেন না। একজন ব্যক্তি হিসেবে আপনি যেন কখনো আমাদের মতো এমন বিপদে কখনো না পড়েন সেজন্যই আমি এটি লিখতে বসেছিলাম। আর আমার বিশ্বাস আমি আপনাদের মাঝে এই ম্যাসেজটি পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। 

সুতরাং , কোনদিন ঐদিকে গেলে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করবেন । 

ফুটনোটঃ 
(ক) মাহমুদ - আমার ক্লাসমেট। একই মেসে থেকেছি দীর্ঘ সময়। যদিও আমরা ভিন্ন ভিন্ন ডিপার্টমেন্টের...! 

7 comments:

নামহীন বলেছেন...

অত্যন্ত ভালো লিখেছেন। লুল

Hannan বলেছেন...

ভাল লাগলো

নামহীন বলেছেন...

আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।

নামহীন বলেছেন...

খুবই সুন্দর উপস্থাপনা ও সতর্কবার্তা।

নামহীন বলেছেন...

Nice vlo laglo

নামহীন বলেছেন...

খুব ভালো লাগলো

নামহীন বলেছেন...

ধন্যবাদ অনেক অনেক ধন্যবাদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন