Cute Orange Flying Butterfly আবেগের অনুভূতি ~ ‎অচিনপুরের আইয়ুব‬
আস-সালামু আলাইকুম। আমি আইয়ুব আনসারি। আমার লেখাগুলো পড়তে প্রত্যহ ব্লগটি ভিজিট করুন

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

আবেগের অনুভূতি

 আবেগের অনুভূতি
                                                                          - আইয়ুব আনসারি(Ayub Ansary)

"আমার বান্ধবী সব কয়টাই প্রেম করে!
আমি একাই সিঙ্গেল।
বয়ফ্রেন্ডকে সময় দিয়ে কূল পায় না, আমাকে ওরা কীভাবে সময় দেবে!
এক কাজ করো তো, আমাকে একটা মনের মতো ছেলে খুঁজে দিও।
আর একা থেকে কী হবে! চুটিয়ে প্রেম করা দরকার এবার।"
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামে মেয়েটা। ওই ছাদের শালিক-জোড়ার দিকে অপলক দৃষ্টি ছিল, এবার তাকাল ছেলেটার দিকে।
ছেলেটা বলল, "যো-যো-যোগ্যতা কী লাগবে তার?"
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েটা বলে, "পুরুষ মানুষের আবার যোগ্যতা!
আমার যোগ্য কোনো ছেলে দুনিয়াতে থাকলে কি আর এতদিন একা থাকি? সব ছেলেই এক, ধরে নিয়ে এসো একটা তোমার পছন্দমতো!"
"ন্ না মানে, ওই যে বললে না মনের মতো!"
ছেলেটার কথা শুনে হা হা করে হেসে উঠল মেয়েটা। বলল, "আমার কল্পনার রাজপুত্রের তো খুব বেশি যোগ্যতার দরকার ছিল না।
আমার চাওয়া অল্পই ছিল।
সে আমাকে শুধু খুব করে একটু আগলে রাখুক!"
হাসল বটে, কিন্তু বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো তার।
চোখে যেন ভেসে উঠল ভুলতে চাওয়া কোনো স্মৃতি।
তবে পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বলল, "তুমি বরং খুব যোগ্য একজনকেই খুঁজে দাও।
ঢাকা শহরের সব রেস্টুরেন্টে খাওয়াবে, ২৪ ঘণ্টার ১৮ ঘণ্টাই ফোন করে কী করি জানতে চাইবে, গিফট কিনে দিবে, সারপ্রাইজ দিয়ে হুলস্থূল করে ফেলবে।
যেই না মনে হবে সে বুঝি আমাকে সত্যি ভালোবাসে, তখনই কোনো এক তুচ্ছ কারণে আমাকে ছুড়ে ফেলে চলে যাবে অন্য কারো কাছে!"
বলতে বলতে আবারও হাসতে থাকে মেয়েটা।
কিছু সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা। ছাদ থেকে নেমে আসে তারপর।
এরপর অনেকবারই দেখা হলো মেয়েটার সাথে।
কখনো সিঁড়িতে, কখনো বাড়ির দরজায়, কখনো বা রাস্তায়।
প্রতিবারই মেয়ের একই কথা, "কই, ছেলে তো খুঁজে দিলে না!
আর কতকাল একা থাকব, বলো!"
বলেই হা হা করে হেসে ওঠে সে।
সেই বিকেলে দমকা হাওয়া ছিল খুব, মেঘও ছিল আকাশে।
তবু প্রতিদিনের মতোই মেয়েটাকে পাওয়া গেল সেই ছাদে।
ছেলেটা এসে দাঁড়াতেই মেয়ে বলল, "কী মহাশয়, পেলেন আমার জন্য ছেলে? আর কতকাল আশায় রাখবেন?"
ছেলেটি বলল, "অ-অ-অনেক খুঁজেছি। প্ প্রতিদিন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবে, সা-সা-সারাক্ষণ খোঁজ নেবে, সারপ্রাইজ দেবে অনেক, এ-এমন ছেলের অভাব নেই।"
"তো কোথায় তারা? আর অভাবই যখন নাই, এতদিন কেন লাগছে?"
"লা-লা-লাগছে কারণ, আ-আমি তো তাদের খোঁজ করিনি।
আমি শুধু খুঁজেছি এমন একজনকে যে খুব করে আগলে রাখতে পারে!"
হাসি মুছে যায় মেয়ের মুখ থেকে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সে।

ছেলেটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল , "প্রতিদিন রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়ানোর সামর্থ্য আমার নেই, ব্যস্ততার জন্য ১৮ ঘণ্টা খোঁজ করাও সম্ভব না। সারপ্রাইজ আমি দিতে পারি না। ভেতর থেকে আসে না, সামর্থ্যও নেই। আমি বড়জোর দশ টাকার বাদাম কিনে রাস্তার ধারে তোমার পাশে হাঁটতে পারি, বসতে পারি ঘাসের বিছানায়। মাঝেসাঝে লিখতে পারি একটা দুটো চিঠি। কিনে দিতে পারি একটা গোলাপ কিংবা বেলিফুলের মালা।
আর... আর এতদিন ধরে নিজের মাঝেই ডুব দিয়ে খোঁজ করলাম অনেক। পেলামও। আর কিছু না পারি, সুখে-দুঃখে খুব করে আগলে রাখতে পারব তোমাকে। ছেড়ে যাব না কখনো!"
এক মুহূর্ত থামে সে। দেখা হলেই দুরু দুরু বুকে কাঁপতে থাকা ছেলেটি এতগুলো কথা বলে ফেলল, কিন্তু একবারও তোতলালো না এবার।
আবার বলল সে, "বিশ্বাস করো মেয়ে, আমার চেয়ে যোগ্য ছেলে আর একটিও খুঁজে পাইনি আমি তোমার জন্য!"

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন